দেবী জগদ্ধাত্রী হলেন দেবী দুর্গারই এক রূপ। জগৎকে ধারণ করেই তিনি জগদ্ধাত্রী। তিনি ত্রিনয়নী, চতুর্ভূজা ও সিংহবাহিনী। হাতে শঙ্খ, চক্র, ধনুক ও বাণ, গলায় সর্পপৈতা। দেবী হস্তীরূপী অসুরের পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান। ভাল করে লক্ষ করলে দেখা যায় সিংহের উপর আসীন দেবীর পদতলে রয়েছে একটি হাতির কাটা মুণ্ড। কেন দেবীর পায়ের নীচে হাতির কাটা মস্তক থাকে?

আসলে দেবী জগদ্ধাত্রী কোনও অসুরকে বধ করেননি, তিনি বধ করছিলেন দেবতাদের অহংকার-রূপী অসুরকে। পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরের কারণে মহিষাসুরকে কোনও পুরুষ বধ করতে পারবে না। তাই প্রয়োজন ছিল এক নারীর। সকল দেবতা নিজ নিজ শক্তি দিয়েই তৈরি করেছিলেন দেবী দুর্গাকে। তাই মহিষাসুর বধের পর অত্যন্ত গর্বিত হয়ে ওঠেন দেবতারা। তাঁরা ভাবলেন দেবী দুর্গা তো তাঁদেরই সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ। অর্থাৎ তাঁরাই তো মহিষাসুরনিধনকারী। দেবী নিমিত্তমাত্র।

দেবতাদের অহং বোধ মোচন করতে তাই এক পরীক্ষা নেন আদ্যাশক্তি। তিনি তাঁদের শক্তি পরীক্ষা করতে একটি তৃণখণ্ড তাঁদের দিকে ছুড়ে দেন। ইন্দ্র বজ্র দিয়ে সেই তৃণটি ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়, অগ্নিদেব সেই তৃণ পোড়াতে পারেন না, বায়ুদেব সেটি উড়িয়ে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন এবং বরুণ দেবের শক্তি সেই তৃণকে জলস্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। সেই সময় আবির্ভূতা হন পরমাসুন্দরী সালঙ্কারা চতুর্ভূজা দেবী জগদ্ধাত্রী। তিনি দেবতাদের বুঝিয়ে দেন যে আসলে তিনিই এই জগতের ধারিণী শক্তি। তিনিই হলেন আদ্যাশক্তি মহামায়া। যিনি মহাকালকেও গ্রাস করেন। সমগ্র জগতকে ধারণ করেন জগদ্ধাত্রী।

হাতির কাটা মুণ্ড হল অহংকার-রূপী অসুর। আর তাকেই পদতলে রেখেছেন দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়া। এখানে দেবতাদের মনের অহংকারকে হাতি রূপে কল্পনা করা হয়েছে। সংস্কৃতে হাতির অপর নাম করী। করী হল দেবতাদের অহংরুপী অসুর। সেই করীন্দ্রাসুরকে বধ করে দেবী করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here