শাস্ত্র অনুসারে, আজও জগন্নাথ দেবের মূর্তির ভিতরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হৃৎপিণ্ড স্পন্দিত হয়, এর পিছনে রয়েছে একটি পৌরাণিক কাহিনি, আসুন জেনে নেওয়া যাক।
কাহিনি অনুসারে, ভগবান শ্রী বিষ্ণু দ্বাপর যুগে শ্রী কৃষ্ণ রূপে মানবরূপে অবতীর্ণ হন। মর্ত্যধামে লীলা সমাপ্ত হলে তিনি দেহ ত্যাগ করে বৈকুণ্ঠে চলে যান। কিন্তু পাণ্ডবরা যখন তাঁর শেষকৃত্য সম্পাদন করেন, তখন শ্রী কৃষ্ণের সমস্ত শরীরের দাহ হলেও তাঁর হৃদয় তখনও স্পন্দিত ছিল। অগ্নি তাঁর হৃদয় পোড়াতে পারেনি। পাণ্ডবরা এই দৃশ্য দেখে বিস্মিত হলেন। তখনই আকাশবাণী হয় যে এটি ভগবান নারায়ণের হৃদয়, তাই তাঁকে সমুদ্রে প্রবাহিত করা হোক।
পাণ্ডবরা শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়কে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। মনে করা হয়, জলে প্রবাহিত শ্রী কৃষ্ণের হৃৎপিণ্ড জলে ভাসতে ভাসতে উড়িষ্যার উপকূলে পৌঁছেছিল। সেই রাতেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্নে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের কাছে আবির্ভূত হয়ে বললেন যে তাঁর হৃৎপিণ্ড সমুদ্র সৈকতে রয়েছে। সকালে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ঘুম থেকে উঠার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের বলা জায়গায় পৌঁছে যান। এর পর প্রণাম তিনি এই মহার্ঘ্য বস্তুটিকে তার সঙ্গে নিয়ে এলো। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন এটি ভগবান জগন্নাথের মূর্তির ভিতরে স্থাপন করেছিলেন, তখন থেকেই এটি সেখানে রয়েছে।
শ্রীজগন্নাথের মূর্তি প্রতি বারো বছর অন্তর প্রতিমা পরিবর্তন করা হয়, কিন্তু হৃদয় অপরিবর্তিত থাকে। জগন্নাথ দেবের নব কলেবরের সময় পুরো শহরের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা যায়। এরপর মূর্তি বদলকারী পুরোহিতরা ভগবানের মূর্তি বদল করেন। সেই সময় পুরোহিতের চোখ বেঁধে রাখা হয় এবং তাঁর হাতের চারপাশে কাপড় জড়ানো থাকে। সেই ভাবেই হৃদয় পুরাতন মূর্তি থেকে সরিয়ে নতুন মূর্তিতে স্থাপন করা হয়। যারা এ পর্যন্ত পুনঃস্থাপন করেছেন তাঁরা সকলেই বলছেন শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় খুবই নরম। এটা কেউ দেখলে তার জীবন বিপদে পড়তে হতে পারে বলে মনে করা হয়।