ডুরান্ড কাপের ১৩৩তম সংস্করণের ফাইনাল স্মরণীয় হয়ে করে রাখল নর্থইস্ট ইউনাইটেড। মোহনবাগানের ঘরের মাঠে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে ডুরান্ড কাপ জিতল নর্থইস্ট ইউনাইটেড। দুই গোলে পিছিয়ে থেকে এশিয়ার প্রাচীনতম টুর্নামেন্ট জিতল নর্থইস্ট টাইব্রেকারে। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফল ২-২। টাইব্রেকারে মোহনবাগান পরাজিত হল ৪-৩ গোলে। ক্লাবের দশ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছেছিল নর্থইস্ট। ফাইনালের মঞ্চ থেকে খালি হাতে ফিরতে হল না। ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম ট্রফি জয়।
প্রথমার্ধের শুরুতেই নিজেদের বক্সে সাহাল আব্দুল সামাদকে জার্সি ধরে টেনে ফেলে দেন আসির আক্তার। পেনাল্টি দিতে ভুল করেননি রেফারি। স্পট-কিক থেকে জেসন কামিন্স ১১ মিনিটে এগিয়ে দেন মোহনবাগানকে। ডুরান্ডের ইতিহাসে সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন সবুজ-মেরুন দল পুরো প্রধমার্ধেই দাপট দেখায়। এরই মাঝে প্রতি আক্রমণে ভাল সুযোগ তৈরি করেছিল নর্থইস্ট। জেসিন টিকে-র হেড বাঁচান বিশাল কাইথ। প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার কয়েক মুহূর্ত আগে দুর্দান্ত পাসিং ফুটবলের নমুনা রেখে মোহনবাগান এগিয়ে যায় ২-০ ব্যবধানে। লিস্টন কোলাসোর পাস থেকে সাহাল আব্দুল দ্বিতীয় গোলটি করেন।
প্রথমার্ধ শেষে জোড়া গোলে হোম টিম মোহনবাগান এগিয়ে থাকার প্রতিফলন দেখা যায় গ্যালারিতেও। পঞ্চাশ হাজারের গ্যালারি তখন স্টেডিয়ামে গানের তালে নেচে উঠেছে। ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে মেক্সিকান ওয়েভ উঠেছে স্টেডিয়ামে। কিন্তু সমর্থকদের এই উচ্ছ্বস দীর্ঘায়িত হয়নি দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর সঙ্গে।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই দুই গোল শোধ করে দেয় নর্থইস্ট এবং দু’টি গোলই চূড়ান্ত দৃষ্টিনন্দন। আরও পরিষ্কার করে বললে দুই মিনিটের স্পেলে দুই গোল শোধ করে নর্থইস্ট। ৫৬ মিনিটে জিতিন এমএস-এর পাস থেকে মরক্কোর ফরোয়ার্ড আলাদিন আজারেই গোল করে ১-২ করেন খেলার ফল। এর তিন মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয় গোলটি আসে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে নামা স্প্যানিশ স্ট্রাইকার গুইলেরমো ফার্নান্ডেজ ডান পায়ের দূরপাল্লার শটে বল জালে জড়িয়ে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানকে দাঁড়াতেই দেয়নি নর্থইস্ট। মুহুর্মুহু আক্রমণে মোহনবাগান ডিফেন্সের নাভিশ্বাস তুলে দেয় নর্থইস্ট। দ্বিতীয় গোলের কিছুক্ষণ পড়েই জিতিন এমএস-এর শট কোনওক্রমে বাঁচান বিশাল কাইথ। এই অর্ধে সরাসরি গোলের মধ্যে থাকা একটি ফ্রি-কিক বাঁচিয়ে দেন বিশাল। দ্বিতীয়ার্ধে পুরোটাই খেলে নর্থইস্ট। মোহনবাগানের ডিফেন্স এবং মাঝমাঠকে অকেজ করে দ্বিতীয়ার্ধে যে ফুটবল উপহার দিয়েছে নর্থইস্ট তাতে মোহনবাগানের গোলে বিশালের মানের গোলরক্ষক না থাকলে ম্যাচটি টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়াত না। এ দিন নর্থইস্টের প্রধান দুই চালিকা শক্তি ছিল মরক্কোর ফরোয়ার্ড আলাদিন এবং জেসিন টিকে।
টাইব্রেকারের প্রথম শটটি বাইরে মারেন কামিন্স। কিন্তু নর্থইস্টের গোলরক্ষক এগিয়ে আসায় রি-কিক পান কামিন্স এবং সেটি থেকে গোল করেন। মোহনবাগানের তৃতীয় এবং প়ঞ্চম শটটি মিস করেন লিস্টন কোলাসো এবং শুভাশিস বসু। বিশাল কাইথের গ্লাভস জোড়ার উপর ভর করে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালের গাঁট উতরে ছিল মোহনবাগান কিন্তু ফাইনালে আর বিশাল ত্রাতা হয়ে উঠতে পারলেন না। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ নতুন তারকার উদয় দেখল। নর্থইস্টের গোলরক্ষক গুরপীত টাইব্রেকারে জোড়া সেভ করেন। ক্লাবটির মালিক জন আব্রাহাম এ দিন ফাইনালে দলের জয় দেখলেন স্টেডিয়ামে বসে। ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজার পর যে ভাবে উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন নর্থইস্ট ফুটবলাররা তাতে বোঝাই যাচ্ছিল গুয়াহাটিতে এই ডুরান্ড নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা কতটা মরিয়া ছিল ক্লাবকে প্রথম সর্বভারতীয় ট্রফি এনে দেওয়ার জন্য।