বর্তমান সময় প্রতিটি পরিবারে কিছু না কিছু রোগ লেগেই রয়েছে। তবে সব রোগের মধ্যে প্যাংক্রিয়াটাইটিস রোগটি ভয়ঙ্কর হতে পারে। আসলে এই অসুখ নিয়ে মানুষের এখনও সচেতনতা অনেকটাই কম। তাই এই রোগ হওয়ার পরও মানুষ প্রথমে চিকিৎসা করান না। তবে এর থেকে ভয়ানক পরিণতি হতে পারে। তাই প্রতিটি মানুষকে প্যাংক্রিয়াটাইটিসের লক্ষণ নিয়ে সতর্ক হয়ে যেতে হবে।

এই প্রসঙ্গে কলকাতা শহরের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: আশিস মিত্র বলেন, অনেকেই প্যাংক্রিয়াটাইটিস রোগটি নিয়ে উদাসীন। তবে দেখা গিয়েছে যে পেটে ব্যথা নিয়ে আসা বহু মানুষের মধ্যেই এই অসুখ দেখতে পাওয়া যায়। তাই এই নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।

ডা: আশিস মিত্র আরও বলেন, আমাদের শরীরে প্যাংক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় বলে একটি অঙ্গ রয়েছে। এই অঙ্গ থেকে বের হয় কয়েকটি জরুরি উৎসেচক। এই উৎসেচক খাবার হজমে সাহায্য করে। এছাড়া এই অঙ্গ থেকে বের হয় ইনসুলিন। সেই ইনসুলিন কিন্তু সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

এহেন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে প্রদাহ হলে সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে মাথায় রাখার বিষয় হল প্যাংক্রিয়াটাইটিসের লক্ষণ জানতে হবে। অনেকেই পেটের আলসারের সঙ্গে বা অন্যান্য রোগের সঙ্গে একে মিলিয়ে দেয়।

প্যাংক্রিয়াটাইটিস কেন হয়?

ডা: আশিস মিত্র বলেন, এর কয়েকটি কারণ রয়েছে-

১. কিছু ওষুধ থেকে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়।

২. গলস্টোন থেকে প্যাংক্রিয়াটাইটিস হতে পারে।

৩. ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে গেলে এই অসুখ হয়।

৪. ভাইরাল ইনফেকশন থেকেও এই রোগ হতে পারে। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু, করোনার মতো ভাইরাস আক্রমণে এই অসুখ হয়ে থাকে।

কী কী লক্ষণ থাকে প্যাংক্রিয়াটাইটিসের? (Pancreatitis Symptoms)

ডা: আশিস মিত্র বলেন, এক্ষেত্রে এই কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়-

পেটের উপরের দিকে ব্যথা হয়। অসহ্য ব্যথা হয়। কমতে চায় না।

বমি পেতে পারে।

বমি হওয়াও সম্ভব।

মূলত এই ৩ হল প্যাংক্রিয়াটাইটিসের ক্লাসিক্যাল লক্ষণ।

প্যাংক্রিয়াটাইটিস নির্ণয় করা হয় কী ভাবে? (Test)

ডা: আশিস মিত্র বলেন, প্রথমে করতে দেওয়া হল লাইপেজ, অ্যামাইলেজ এনজাইম টেস্ট। প্যাংক্রিয়াটাইটিস হলে এই এনজাইম শরীরে বেশি থাকে। অনেক সময় অন্য কারণেও প্যাংক্রিয়াটাইটিস হয়। সেক্ষেত্রে এইএসজি করেও দেখা হয় স্টোন আছে কিনা।

চিকিৎসা কী প্যাংক্রিয়াটাইটিসের? (Treatment)

ডা: আশিস মিত্র বলেন, এই অসুখ হলে একদম হাসপাতালে ভরতি করে দিতে হবে। এই সময় খাওয়ার দেওয়া হয় না রোগীকে। বরং স্যালাইনের মাধ্যমে শরীরে পুষ্টিদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হয়। এতে প্যাংক্রিয়াস বিশ্রাম পায় ও দ্রুত সুস্থ হয়। এছাড়া প্রদাহ কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। এটাই মূলত চিকিৎসা। ৭ থেকে ১০ দিনে রোগী ভালো হয়ে যান।

প্যাংক্রিয়াটাইটিস হওয়ার পর জীবন? (Lifestyle)

ডা: আশিস মিত্র বলেন, এই অসুখ হওয়ার পর প্যাংক্রিয়াস আর ঠিকমতো এনজাইম বের করতে পারে না। তাই রোগী খাওয়ার আগে এনজাইম দিতে হয়। এটা মোটামুটি সারাজীবন খেতে হয়। এছাড়া মাথায় রাখতে হবে যে ফ্যাট জাতীয় খাবার এই অসুখে খাওয়া যায় না। এতে সমস্যা বাড়তে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here