
মূলত কুম্ভমেলা প্রতি ৪ বছর অন্তর আয়োজিত হয়। প্রতি ৬ বছর অন্তর হরিদ্বার এবং প্রয়াগে অর্ধকুম্ভ আয়োজিত হয়। প্রতি ১২ বছর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিকে আয়োজিত হয় পূর্ণকুম্ভ। হিন্দু ধর্ম মতে, এই পুণ্যলগ্নে গঙ্গায় স্নান করলে পাপমোচন হয়। সেই কারণেই প্রয়াগে এত মানুষের সমাগম হয়। এবার ১৪৪ বছর পর ভারতের প্রয়াগরাজে বসেছে মহা কুম্ভ।
সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য
প্রয়াগরাজে মহা কুম্ভ শুরু হয়েছে ১৩ জানুয়ারি থেকে। চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই প্রয়াগরাজ আগে এলাহাবাদ নামে পরিচিত ছিল। গোটা দেশ থেকে সাধু-সন্ত, পুণ্যার্থীরা পুণ্য অর্জনের লক্ষ্যে কুম্ভমেলায় আসেন। বিদেশ থেকেও প্রচুর মানুষ হিন্দু ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কুম্ভমেলায় আসেন। সামনেই রয়েছে মৌনী অমাবস্যা। ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যায় মহা কুম্ভে প্রথম শাহী স্নানের দিন। সেদিন বহু মানুষ ত্রিবেণী সঙ্গমে পুণ্যস্নান করবেন। এই শাহী স্নান উপলক্ষে বহু মানুষ আসবেন মহা কুম্ভে। বাংলা থেকেও বহু মানুষ গিয়েছেন কুম্ভে। অনেকের যাওয়ার ইচ্ছাও রয়েছে। যদি কুম্ভমেলায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, আর গিয়ে যদি কোনওরকম সমস্যায় না পড়তে হয়, তাহলে কয়েকটি বিষয় যাওয়ার আগে জেনে রাখা ভাল।
প্রথমবারের পর্যটকদের জন্য টিপস
অভিনেতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবশালী যবিন শুক্লা মহা কুম্ভ শুরু হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত ভিডিও পোস্ট করছেন। কোথায় কী সুবিধা রয়েছে, কোথায় গেলে সমস্যা হতে পারে, সবকিছুই ভিডিওতে জানিয়েছেন তিনি। একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মহা কুম্ভ আসতে ইচ্ছুক পর্যটকদের।
১- ব্যাগপত্রের বোঝা কমান
কোথাও গেলে আমরা ব্যাগে জিনিসপত্র নিই। কয়েকদিনের জন্য গেলে লটবহর বেড়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাগের সংখ্যাও বেড়ে যায়। একজনের জন্য অনেক ব্যাগও হয় কিছু কিছু সময়। মহা কুম্ভে গেলে একটা বিষয় মাথা রাখতে হবে। যেহেতু যানবাহন পাওয়ার সমস্যা রয়েছে, তাই নিজে যতটুকু ভার বহন করতে পারবেন, ততটাই বহন করুন।
২- হাঁটতে হবে
যদি ট্রেনে আসেন তাহলে অন্তত ৬-৮ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে আসতে হতে পারে। ১০ কিলোমিটার রাস্তাও হাঁটতে হতে পারে। আর সঙ্গে মালপত্র নিয়েই হাঁটতে হবে। তাই হাঁটার অভ্যাস রাখতে হবে।
৩- যান চলাচল বন্ধ
কুম্ভমেলায় পুণ্যস্নানের মোট ৬টি পর্ব থাকে। যাকে বলা হয় শাহী স্নান। তার মধ্যে এখন বাকি আছে ৪টি। আগামী ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যার দিন যে শাহী স্নান হবে তার ২দিন আগে এবং পরের ২ দিন অর্থাৎ ২৭ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রয়াগরাজে যান চলাচল বন্ধ থাকবে। একইরকম ভাবে বসন্ত পঞ্চমী অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর দিন যে শাহী স্নান হবে তার ২ দিন আগে এবং পরের ২ দিন অর্থাৎ ১-৫ ফেব্রুয়ারি যান চলাচল বন্ধ থাকবে। সেটা মাথায় রাখবেন।
৪- স্টেশন বন্ধ
শাহী স্নানের দুদিন আগে বন্ধ করে দেওয়া হবে প্রয়াগরাজ সঙ্গম স্টেশন। কুম্ভমেলায় আসার এটাই নিকটবর্তী স্টেশন। তবে প্রয়াগ জংশন এবং ঝুঁসি স্টেশন খোলা থাবে। সেখান থেকেই আসতে হবে।
৫- অটো-টোটো বাং অ্যাপ ক্যাবের সুবিধা নেই
মহা কুম্ভমেলার প্রাঙ্গন তো বটেই, সংলগ্ন এলাকাতেও অটো-টোটো বা অ্যাপ ক্যাবের সুবিধা নেই।
৬- স্টেশনে কোনও লকার রুম নেই
৭- নরম আরামদায়ক জুতো পরুন
প্রচুর হাঁটাহাঁটি করতে হবে তাই নরম আরামদায়ক জুতো পরাই ভাল। যেহেতু যানবাহন নেই বললেই চলে তাই হাঁটা ছাড়া গতি নেই। সেক্ষেত্রে নরম আরামদায়ক জুতো পরলে পায়ের রক্ষে।
৮- আরামদায়ক পোশাক পরুন
সারাদিন বাইরেই ঘোরাঘুরি করতে হবে তাই এমন পোশাক পরুন যাতে অস্বস্তি না লাগে। জলে ভিজেও যেতে পারে পোশাক। সুতরাং ঢিলেঢালা, সহজে শুকিয়ে যায় এমন পোশাক পরুন। তবে প্রয়াগরাজে ঠান্ডা রয়েছে। সেটা মাথায় রাখতে হবে।
৯- মোবাইল নেটওয়ার্ক
মোবাইল নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই একটি সিমকার্ড কাজ না করলে অন্য সিম কার্ড ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। দুটো সিমকার্ড সঙ্গে রাখা ভাল।
১০- হারিয়ে গেলে
মহা কুম্ভের মেলাপ্রাঙ্গনে মোট ১০টি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে। হারিয়ে গেলে ওয়াচ টাওয়ার থেকে নাম ঘোষণার ব্যবস্থা রয়েছে। মূল সঙ্গমক্ষেত্রের জন্য যেতে হবে ১ নম্বর মিনারে।
এছাড়াও এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন-
জরুরি কাগজপত্র সামলে রাখুন, সঙ্গে দামি গয়না, জিনিস না রাখাই ভাল।
অচেনা লোকের উপর চট করে ভরসা করবেন না।
স্নানের ক্ষেত্র বলে উল্লেখ নেই এমন জায়গায় স্নান করবেন না।
রাস্তাঘাটে যার তার কাছ থেকে প্রসাদ খাবেন না।
রাস্তার ধারের স্টল থেকে খাবার না খাওয়াই ভাল।