সারা বিশ্বে হিন্দুধর্ম ও দর্শন প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন তিনি। বিবেকানন্দের মৃত্যু নিয়ে কোনও রহস্য সেইভাবে না থাকলেও কিছু ভিন্ন মত ও ধারণা রয়েছে।
স্বামীজি সর্বদা শারীরিক শক্তির উপর জোর দিয়ে এসেছেন। তিনি বলেছিলেন, “বসে গীতা পড়ার চেয়ে মাঠে ফুটবল খেলা ভাল।”আশ্চর্যের বিষয় হল, স্বামীজীর একমাত্র প্রিয় ভক্ত ভগিনী নিবেদিতাকে মৃত্যুর তিনদিন আগেই মৃত্যুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ১৯০২ সালে ২ জুলাই, নিবেদিতাকে নেমন্তন্ন করে পরম যত্নে নিজের হাতে করে খাইয়েছিলেন তিনি। বারে বারে নানাভাবে ইঙ্গিত দিলেও সেই মুহূর্তে বুঝতে পারেননি যে, স্বামীজী নিজেই মহাপ্রয়াণের কথা বলছেন।
২০০৩ সালে বাঙালী উপন্যাসিক শঙ্কর ‘জানা অজানা বিবেকানন্দ’ বইয়ে লেখেন ৪ জুলাই, স্বামীজীর মৃত্যুর সময়ে ভগিনী নিবেদিতা স্বপ্নে দেখেছিলেন, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের দেহ দ্বিতীয় বার ধরাধাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করেন স্বামীজির দেওয়া দ্বিতীয় মৃত্যুর বার্তা এটিই ছিল।
শুধু তাই নয়, স্বামীজি তার অনুগামী স্বামী অভেদানন্দকে তার মৃত্যুর ৫ বছর আগেই তার মহাপ্রয়াণে কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন , ” বুঝলে অভেদানন্দ আমি হয়তো আর পাঁচ ছয়েক বছর বাঁচবো, আমার আত্মা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে । এত বড় হয়ে যাচ্ছে যে,শরীরের মধ্যে থেকে তাকে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না , সে বারে বারে এ শরীর ছেড়ে পালাতে চাইছে “।
তাঁর লেখা বই থেকে জানা যায়, ৪ জুলাই, তাঁর মহাপ্রয়াণের দিন স্বামীজি অত্যন্ত সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলেন। বেলুড় মঠের প্রার্থনা গৃহে তিন ঘণ্টা ধ্যান করেন তিনি। এরপর ছাত্রদের শুক্লা-যজুর্বেদ, সংস্কৃত ব্যকরণ ও দর্শনশাস্ত্র শেখান। পরে স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ পায়চারি করেন তিনি, আলোচনা করেন রামকৃষ্ণ মঠের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
গঙ্গার থেকে প্রচুর ইলিশ কিনিয়েছেন বিবেকানন্দ। সবার সঙ্গে বসে দুপুরে খেয়েছিলেন ইলিশের নানা পদ। সন্ধে ৭টা নাগাদ নিজের ঘরে চলে যান তিনি। বলে যান, এখন কেউ যেন তাঁকে বিরক্ত না করে। ঘরে গিয়ে ধ্যানে বসেন তিনি। ধ্যান করতে করতেই রাত ৯টা ১০ মিনিটে স্বামীজির শরীর আনন্দলোকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
উল্লেখ্য, শিষ্যদের মতে, বিবেকানন্দ মৃত্যুর আগে মহাসমাধি লাভ করেছিলেন। যদিও মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যাওয়াই মৃত্যু সম্ভাব্য কারণ হিসেবে দাবি করছে ডাক্তারি রিপোর্ট। তাছাড়া বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুর আগে ২ বার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর দিনও ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বলে ডাক্তারদের ধারণা। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ডাক্তাররাও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। তাঁর শিষ্যদের দাবি, মহাসমাধির সময় মস্তিষ্কের ব্রহ্মরন্ধ্র ফেটে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব একবার বলেছিলেন, নরেন যবে বুঝতে পারবে তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে, তখন সে নিজেই চলে যাবে। স্বয়ং বিবেকানন্দই বলেছিলেন, ৪০ বছরের আগেই তিনি চলে যাবেন। স্বামীজির যখন মৃত্যু হয়, তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৯ বছর ৫ মাস ২৫ দিন।