মৃতদেহ সৎকারের পদ্ধতি সব ধর্মেই আলাদা। যেমন হিন্দুদের মধ্যে মৃতদেহ দাহ করা হয়। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের দেহ সমাধিস্থ করা হয়। খ্রিস্ট ধর্মেও নিয়ম প্রায় এক। তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একটি ভিন্ন প্রক্রিয়া রয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মে, সন্ত ও সাধুদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের অন্তেষ্টিক্রিয়ার পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে মৃত্যুর পর মৃতদেহ সমাহিতও করা হয় না, দাহও করা হয় না। বরং মৃতদেহকে ছোট ছোট টুকরো করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মে কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর মৃতদেহকে অনেক উঁচু স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ বলে যে শেষকৃত্যের প্রক্রিয়া আকাশে সম্পন্ন হয়। এই কারণেই মৃতদেহকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতিমধ্যেই তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের শেষকৃত্যের জায়গা রয়েছে। বৌদ্ধ ভিক্ষু বা লামারা মৃতদেহ আসার আগেই শ্মশানে পৌঁছে যান। এরপর সেখানকার স্থানীয় রীতি অনুযায়ী পূজা হয়। ‘রোগ্যাপাস’ নামের এক বিশেষ কর্মী মৃতদেহটিকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে ফেলেন। তারপর এটি আটার দ্রবণ তৈরি করে তাতে নিমজ্জিত করা হয়।

মৃতদেহের টুকরোগুলি আটার দ্রবণেই ডুবিয়ে রাখা হয়, যা পরে শকুন ও ঈগল খেয়ে থাকে। বাকি যা থাকে তা পিষে গুঁড়ো তৈরি করা হয়। এই গুঁড়ো আবার আটার দ্রবণে ডুবিয়ে রাখা হয়। তারপর অন্যান্য পাখিদের খাওয়ানো হয়।

তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের শেষকৃত্যের এই জটিল ঐতিহ্য অনুসরণের পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। কথিত আছে, উচ্চতার কারণে তিব্বতে গাছের কাঠ সহজে পাওয়া যায় না। সেই সঙ্গে সেখানকার জমিও পাথুরে, তাই মৃতদেহ সমাহিত করা সহজ নয়। অন্যদিকে, বৌদ্ধধর্মে মৃত্যুর পর দেহকে একটি খালি পাত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এও মনে করা হয় যে, মৃতদেহকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে পাখিদের খাওয়ালে তাদের মঙ্গল হবে। একে বলা হয় ‘আত্মবলিদান’। এই সমস্ত কারণ ও বিশ্বাসের কারণে বৌদ্ধধর্মে এই ধরনের মৃতদেহ সৎকারের প্রক্রিয়া গৃহীত হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here