ভূত আর রহস্য এ নিয়ে সিনেমা তৈরি করলে তা হিট হবেই হবে এ যেন লিখে দেওয়া যায়।  বাংলা চলচ্চিত্র জগতে বহু সময় ভূত নিয়ে বেশ কিছু সিনেমা এসেছে। তাদের কোনওটা সাহিত্য নির্ভর কোনওটা আবার চিত্রনাট্যকারের মনের ফসল। আজ জেনে নেওয়া যাক বাংলায় ভূত নির্ভর কিছু সিনেমার কথা।

১৯৫০ সালে নরেশ মিত্রর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল কঙ্কাল। ধীরাজ ভট্টাচার্য, রবি রায়, জীবন বসুর মতো তাবড় তাবড় অভিনেতা ছিলেন এই সিনেমায়। বাংলায় সম্ভবত আদ্যপান্ত ভয়ের প্রথম বাংলা সিনেমা ‘কঙ্কাল’।

১৯৬০ সালে তপন সিংহ পরিচালিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প নির্ভর ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ জনমানসে যথেষ্ট ভয়ের প্রভাব ফেলেছিল। এই সিনেমায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, ছবি বিশ্বাস, রাধামোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, অরুন্ধতী দেবী, দিলীপ রায়ের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ছবির সুরকার ছিলেন আলী আকবর খান। এক কর সংগ্রাহকের সঙ্গে এক অশরীরীর সম্পর্কই ছিল ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর মূল প্রতিপাদ্য।

১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ পেয়েছিল ‘তিন কন্যা’। এই সিরিজেরই একটি সিনেমা ছিল ‘মণিহারা’। কালী বন্দ্যোপাধ্যায় ও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনবদ্য অভিনয়ে ‘মণিহারা’ শিহরণ জাগিয়েছিল।

সত্যজিতের হাত ধরেই বাঙালির পায় ভূতের রাজাকে। ওমন ভাল ভূত ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’-এর আগে মানুষ দেখেনি তা হলফ করে বলা যায়। ১৯৬৯ সালে ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’ তপেন চট্টোপাধ্যায় (গুপি) ও রবি ঘোষ (বাঘা)-কে বাঙালি মননে চিরকালের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। শুধু এই দুই মহারথীই কেন, গুপী গায়েন বাঘা বায়েন সমৃদ্ধ হয়েছে যেমন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর লেখনী ও সত্যজিতের পরিচালনা-সঙ্গীতের গুনে, তেমনই জহর রায়, সন্তোষ দত্ত, নৃপতি চট্টোপাধ্যায়, চিন্ময় রায়ের মতো অভিনেতাদের অভিনয় এই সিনেমার অন্যতম সেরা অঙ্গ।

১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও মুনমুন সেন অভিনীত নিশিতৃষ্ণা। ভ্যাম্পায়ার ভিত্তিক প্রথম সিনেমা ছিল এটি। মুনমুন-প্রসেনজিতের পাশাপাশি ছিলেন আল্পনা গোস্বামী, অরুণ মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা।

২০০৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল পাতালঘর। এটি সম্পূর্ণ ফ্যান্টাসি ভিত্তিক সিনেমা। ‘পাতালঘর’-এ ভূতের চরিত্রের নাম ছিল অঘোর সেন।  ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েছিল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে গোঁসাইবাগানের ভূত। এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, টিনু আনন্দ, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা।

২০১২ সালে সন্দীপ রায় বাবার মতোই তৈরি করেছিলেন ভৌতিক সিরিজ। সত্যজিৎ রায়ের ‘অনাথবাবুর ভয়’ ও ‘ব্রাউন সাহেবের বাড়ি’ এবং শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভূত ভবিষ্যৎ’ নিয়ে তিনি তৈরি করেন ‘ যেখানে ভূতের ভয়’। এরপর অনীক দত্তের ভূতের ভবিষ্যৎ ২০১২ সালে সবচেয়ে বড় হিট। সম্পূর্ণ স্যাটায়ারের মোড়কে তৈরি এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন পরান বন্দোপাধ্যায়, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সুমিত সমাদ্দার, মুমতাজ সরকার, সমদর্শী দত্ত, শ্বাশত চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, খরাজ মুখার্জী, মীর আফসর আলীর মতো ওভিনেতারা।

২০১৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল অপর্ণা সেন পরিচালিত ‘গয়নার বাক্স’। এই সিনেমায় মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, কঙ্কনা সেন শর্মা ও শ্রাবন্তী চতটোপাধ্যায়ের অভিনয় মুগ্ধ করে। এরপর বাংলায় বহু ভূতের সিনেমায় তৈরি হয়েছে, কিন্তু দাগ কাটতে পেরেছে কতগুলি তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here