বাগদেবী সরস্বতীর অপর হয়। দেবীভগবৎপুরান অনুযায়ী তিনি বিষ্ণুর জিহ্বাগ্র থেকে উৎপন্ন হয়েছেন। সরস্বতী বাক্য, বুদ্ধি, বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। জিহ্বাগ্রে সরস্বাতীর অধিষ্ঠানে বাক অর্থাৎ বাক্য হয় সুমধুর। সরস্বতী আসলে নদী। ব্রহ্মার আহ্বানে মর্তে দেবী নদী রূপেই বাহিত হন। নদীরূপ থেকে দেবীরূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাক্-এর সঙ্গে সরস্বতী অভিন্ন হয়ে পড়েন। অথচ ঋকবৈদিক যুগে বাক ছিলেন সম্পূর্ণ অন্য এক দেবী। আর সরস্বতীর সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ ছিল না। ঋগ্বেদের বাকদেবী মূলত বাক্যের অধিষ্ঠাত্রী।
সরস্বতী পুজোর ক্ষেত্রে একটি কথা অত্যন্ত প্রচলিত রয়েছে। বলা হয়, ‘লাগ লাগ সরস্বতী মোর কণ্ঠে লাগ যাবৎ জীবেৎ তাবৎ থাক’। ের অর্থ হল যতদিন আমরা পৃথিবীতে জীবিত থাকব ততদিন আমাদের কণ্ঠে, জিহ্বাগ্রে যেন বাকদেবীর অধিষ্ঠান হয়। কোনও অপশব্দ যেন কারও উদ্দেশ্যে মুখ থেকে নির্গত না হয়। বাক বা কথা যেন হয় মধুর।
এই বাক ছিলেন ঋক বৈদিক যুগের প্রতিষ্ঠিত দেবী। সেই সময় শুধু বাক নন, তার সঙ্গে ছিলেন ইলা, ভারতী ও সরস্বতীরা। পরবর্তী বৈদিক যুগে তিন দেবীই একাকার হয়ে সরস্বতী রূপে পূজিতা হলেও পরবর্তী কালে সরস্বতীই এদের মধ্যে প্রধানা হন। অন্যরা স্বতন্ত্রতা হারান।
বৈদিক যুগ ছিল মূর্তি পুজো বিরোধী। তাই সেই সময় সরস্বতী মূর্তি রূপে পূজিতা না হয়ে নদী রূপে পূজিতা হতেন। তার জলেই উপাস্য ঈশ্বরের আরাধনা করতেন মুনি ঋষিরা।