
অশ্বত্থামা, মহাভারতের এক ট্র্যাজিক নায়ক। মহাভারত বলে তিনি কৃষ্ণের শাপে শাপিত। অথচ অশ্বত্থামাও ছিলেন এক মহারথী। তাঁর বাবা দ্রোণাচার্য ছিলেন পাণ্ডবদের শিক্ষাগুরু। অস্ত্রশিক্ষা থেকে বেদ অধ্যয়ন, কৌরব-পাণ্ডবদের শিক্ষাগুরু ছিলেন তিনি। অশ্বত্থামাও শিক্ষা নিয়েছিলেন বাবার কাছেই। কিন্তু তাঁর ছিল সিংহাসনের লোভ। সেই লোভ সংবরণ করতে পারেননি বলেই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তিনি কৌরব পক্ষে যোগদান করেন। অধর্মের কাছে ধর্মকে বিকিয়ে দিয়েছিলেন অশ্বত্থামা।
অশ্বত্থামা পঞ্চপান্ডব পত্নী ও পাঞ্চাল রাজকন্যা দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেন। অশ্বত্থামার লক্ষ্য ছিল পঞ্চ পান্ডব, তিনি জানতেন না সেই তাবুতে ঘুমিয়ে রয়েছেন পান্ডবদের পাঁচ পুত্র। নিজের ভুল যখন অশ্বত্থামা বুঝতে পারেন তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছেন। ক্রুদ্ধ হয়ে তখন তিনি অর্জুন সুভদ্রা পুত্র অভিমন্যুর স্ত্রী উত্তরার গর্ভস্থ সন্তানকে হত্যা করতে ব্রহ্মাস্ত্র ছোঁড়ে। এরপরই কৃষ্ণ রেগে গিয়ে অশ্বত্থামার কপালে অক্ষিকোটরে থাকা মণি ছিনিয়ে নেন। ওই মণিই ছিল অশ্বত্থামার শক্তি। শ্রী কৃষ্ণ অশ্বত্থামাকে অমরত্বের অভিশাপ দিয়ে বলেন দ্রোণপুত্র মৃত্যুকে ব্যাকুল হয়ে চাইবে, কিন্তু মৃত্যু তার কাছে আসবে না। কথিত আছে, এরপর থেকে আজ পর্যন্ত ৫ হাজার বছর ধরে জীবিত রয়েছেন অশ্বত্থামা।
মহাভারতের যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধক্ষেত্রে তা আজকের হরিয়ানা। বলা হয় অশ্বত্থামা যুদ্ধের পর চলে আসেন মধ্যপ্রদেশের দিকে। ঘন জঙ্গল, ঋষি মুনিদের তপোভূমিতে এসেছিলেন তিনি। বুরহানপুরের অসিরগড় কেল্লার কাছেই একটি প্রাচীন শিবমন্দির রয়েছে। সেখানে প্রায়-ই দেখা যেত এক দীর্ঘকায় ব্রাহ্মণকে যার কপালে একটি গভীর ক্ষত রয়েছে। সেখান থেকে চুঁইয়ে পড়ে রক্ত। স্থানীয়দের মতে, ওই ব্যক্তি কারও কোনওদিন ক্ষতি করেন না। তিনি লোকালয় থেকে বাইরে থাকেন। তিনি বিশ্বাস করেন তাঁর সঙ্গে কারও জীবন জড়ালে সেও অভিশপ্ত হবে। তাই অশ্বত্থামা আজও বেঁচে রয়েছেন বলে আজও বহু মানুষ অনেকেই বিশ্বাস করেন।
নিজের পুনর্জন্মের জোরে উত্তরা পুত্রকে নতুন জীবন দান করেন শ্রীকৃষ্ণ। জন্মের আগেই পরীক্ষা দিতে হয়েছিল সেই শিশুকে। তাই কালক্রমে অভিমন্যু ও উত্তরার সন্তান পৃথিবীতে পরিচিত হন পরীক্ষিৎ নামে।