বেঙ্গালুরুতে আত্মঘাতী হলেন ৩৪ বছরের আইটি কর্মী অতুল সুভাষ। সোমবার তাঁকে তাঁর নিজের বাড়িতেই ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশসূত্রে জানা গিয়েছে, অতুল একটি ২৪ পাতার সুইসাইড নোট লিখে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। সুইসাইড নোটের ৪ পাতা হাতে লেখা, বাকি টাইপ করা। সেখানেই পাওয়া গিয়েছে তাঁর উপর স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবারের অত্যাচার, হেনস্থার বিবরণ।
উত্তরপ্রদেশের ছেলে অতুল কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুর মারাঠাহালি থানার অন্তর্গত মঞ্জুনাথ লে আউটে থাকতেন। সেই শহরেই একটি বেসরকারি সংস্থায় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বেশ কিছুদিন আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর থেকে তিনি একাই থাকতেন।
সুইসাইড নোটে আইটি কর্মী অতুল সুভাষ সরাসরি তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন তাঁর স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবারকে। স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবারের হেনস্থা, অত্যাচারের শিকার হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অতুল, জানা গিয়েছে সুইসাইড নোট থেকে। এই নোট তিনি বেশ কয়েকজনকে ইমেল করেন এবং একটি এনজিওর হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও শেয়ার করেন। নোটে অতুল লিখেছেন, তাঁর স্ত্রী বিচ্ছেদের পর থেকেই মাসে ৪০ হাজার টাকার ভরণপোষণ পান, অথচ তিনি অ্যাক্সেঞ্চারের মত বড় টেক সংস্থায় কাজ করেন, নিজে ভাল টাকা উপার্জন করেন। আর তা সত্ত্বেও তিনি অতিরিক্ত ২-৪ লাখ টাকা দাবি করেন।
মৃত্যুর আগে একটি ভিডিও রেকর্ডিংও করেন অতুল। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায় যে তাঁর উপার্জনের টাকা তিনি তাঁর শত্রুকে আরও শক্তিশালী করার জন্য দিয়ে যেতে আর চান না, তাই তাঁর আত্মহত্যা এই টাকা সরবরাহে ইতি টানবে। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘যে কর আমি বেতনের থেকে সরকারকে জমা দিই তা পুলিশ, আইন ব্যবস্থা এবং আমার স্ত্রী-স্ত্রীর পরিবারকে সহায়তা করছে আমাকে হেনস্থা করার জন্য’। শুধু তাই নয়, অতুলের ঘর থেকে একটি হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডও পাওয়া গিয়েছে যাতে লেখা রয়েছে, ‘বিচার বাকি আছে’।
বেঙ্গালুরু পুলিশ ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। অতুল সুভাষের স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। অতুলের ভাই বিকাশ কুমার পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন অতুলের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগে বিকাশ জানিয়েছেন যে বিচ্ছেদের পরে চারজন ব্যক্তি তাঁর দাদার উপর মিথ্যে মামলা দায়ের করে এবং মামলা নিষ্পত্তির জন্য ৩ কোটি টাকা দাবি করেন। এমনকী তাদের যে ৪ বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে তাঁকে দেখতে যাওয়ার জন্যও ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছেন অতুলের স্ত্রী। ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ে অতুল জানিয়েছেন তাঁর শেষ ইচ্ছা এটাই যেন তাঁর সন্তানকে ‘মূল্যবোধহীন’ স্ত্রীর কাছে না রেখে অতুলের নিজের বাবা-মায়ের কাছে রাখতে দেওয়া হয়।
২৪ পাতার ওই সুইসাইড লেটারে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেমন অভিযোগ এনেছেন, তেমনই চার বছরের সন্তানের জন্য লিখে গিয়েছেন, “একদিন তুমি বড় হবে। বুঝতে শিখবে। যখন আমি প্রথম তোমায় দেখেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল তোমার জন্য যেকোনও দিন প্রাণ দিতে পারি। কিন্তু আমি তোমার জন্য নিজের প্রাণ নিচ্ছি। এখন তোমার ১ বছরের ছবি না দেখলে, তোমার মুখও মনে পড়ে না। তোমার জন্য কষ্ট ছাড়া আর কিছুই অনুভব হয়না। তোমায় শুধু ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তোমার কষ্ট হলেও, সত্যিটা হল তোমায় আমার ভুল বলেই মনে হয়।”
অতুল আক্ষেপ প্রকাশ করে লিখেছেন, “যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি এবং টাকা উপার্জন করছি, ততক্ষণই আমার দরকাপ। ওরা তোমায় ব্যবহার করে আমার থেকে টাকা আদায় করার জন্য। আমি এভাবে আমার বাবা-মা ও ভাইকে হেনস্থা হতে দিতে পারিনা। তোমার মতো ১০০ সন্তানকে ত্যাগ করতে পারি আমার বাবার জন্য। ১০০০টা আমাকে ত্যাগ করতে পারি তোমার জন্য়।”
ছেলের জন্য অতুল আরও লিখে গিয়েছিলেন, “সমাজকে বিশ্বাস করো না। ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করো না। যদি আমার রক্ত থাকে তোমার শরীরে, তবে তুমি লড়বে এবং মন-প্রাণ দিয়ে ভালবাসবে, সুন্দর জিনিস তৈরি করবে এবং সমস্যাকে শেষ করবে।”