বড়া ইমামবাড়া লক্ষ্ণৌর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারা বিশ্ব থেকে বহু মানুষ আসেন। বড়া ইমামবারা বা আসফি মসজিদের স্থাপত্যের ঔজ্জ্বল্য শুধু ভারতে নয়, পৃথিবীজোড়া এর খ্যাতি। ১৭৮৪ সালে অযোধ্যার চতুর্থ নবাব আসাফ-উদ-দৌল্লা বড়া ইমামবাড়া নির্মাণ করেছিলেন। এর নকশা করেছিলেন কিফায়াত-উল্লাহ। তিনি ছিলেন তাজমহলের প্রধান স্থপতি ওস্তাদ-আহমদ লাহোরির আত্মীয়। বড়া ইমামবাড়ার অর্থ বিশালাকার উপাসনালয়।
লক্ষ্ণৌয়ের এই রহস্যময় স্মৃতিস্তম্ভটি সর্বদাই বিজ্ঞান অনুরাগীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আরবি এবং ইউরোপীয় দীপ্তিতে দীপ্যমান বড়া ইমামবাড়ার দুর্দান্ত কাঠামো মাধ্যাকর্ষণণের ধারণাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানায়।
ঐতিহাসিক স্থানটির একটি রহস্যময় বিষয় হল সৌধটির মূলকক্ষের নির্মাণ প্রকৌশল। বিশ্বের এই বৃহত্তম খিলানযুক্ত চেম্বারটি একেবারে ধনুকাকৃতিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোনওরকম বাহ্যিক সাহায্য ছাড়াই মহাকর্ষের যুক্তিকে অস্বীকার করে এটি দাঁড়িয়ে রয়েছে যা সবকিছুকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টেনে নেয়।
লক্ষ্ণৌর অন্যতম বড় আকর্ষণ হল বড়া ইমামবাড়ার ভুলভুলাইয়া। এই গোলকধাঁধা-সদৃশ স্মৃতিস্তম্ভের সবচেয়ে অস্পষ্ট অংশগুলির মধ্যে একটি হল এতে দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য এতে ১০২৪টি দরজা রয়েছে। মাত্র ২টি রয়েছে প্রস্থানের জন্য।
বড় ইমামবাড়ার পশ্চিম দিকে অবস্থিত আসিফ মসজিদটি আসলে নবাব আসাফ-উদ-দৌলের সমাধি। এটি মুঘল স্থাপত্যের এক নিদর্শন। বিশাল হলের মাঝখানে নবাবের সমাধি এবং মুকুট রক্ষিত হয়ে চলেছে। এই হলের বারান্দার কাছে অস্ফুটে ফিসফিস শব্দ দর্শকদের জন্য বেশ রহস্যের উদ্রেক করে।
বড়া ইমামবাড়ার পূর্ব দিকের পাঁচতলা শাহী বাওলি (সিঁড়ি) নবাব এবং তার কর্মকর্তাদের গোপন নজরদারি ব্যবস্থা বলে মনে করা হয়। এই বাওলিগুলি আসলে কুয়ো। মনে করা হয় নবাবী অভিজাতরা অই কূপের অভ্যন্তরীণ পূর্ব দিকের কক্ষ থেকে দর্শনার্থীদের দিকে নজর রাখতেন। এই বাওলি গুলি এমনভাবে গঠিত হয়েছে যাতে দর্শনার্থীদের প্রতিফলন কুয়োর জলে পড়ে। শাহী বাওলি, শাহী হাম্মাম নামেও পরিচিত। এটি গোমতীর সঙ্গে সংযুক্ত। এই বাওলির নীচের তিনটি সারা বছরই জলে ডুবে থাকে।
সব কিছুর পরে এটা জানা দরকার যে দেশবাসীর প্রতি নবাবের ভালোবাসার প্রমাণ বড়া ইমামবাড়া। এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পিছনে নববের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির চিন্তা কাজ করেছিল। সেই সময় অযোধ্যায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়টেছিল। এই বৃহৎ স্থাপত্য প্রকল্পে নবাব আসফ-উদ-দৌলার রাজ্যের ধনী, দরিদ্র এবং অভিজাত মিলিয়ে ২০,০০০ জনেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছিল।