ভারতীয় পুরান তিন ঈশ্বরকে সর্বাগ্রে রেখেছে। তাঁরা হলেন ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর। ত্রিলোকের অধিকারী এই তিন দেব সকলের কাছেই আরাধ্য। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শিব ও বিষ্ণুর মন্দির রয়েছে,। সেসব দর্শনীয় স্থান। অপেক্ষাকৃত অনেক কম মন্দির রয়েছে ব্রহ্মার। রাজস্থানের পুষ্কর, ভুবনেশ্বরে রয়েছে ব্রহ্মার মন্দির। কিন্তু ঈশ্বরবিশ্বাসী দেশের সর্বত্র মুড়ি মুড়কির মতো গজিয়ে ওঠেনি ব্রহ্মা মন্দির। বাড়ি বাড়ি শিব পুজো, নারায়ণ পুজো তো হয়, কিন্তু আলাদা করে ব্রহ্মা পুজো হয় বলে শুনেছেন কি? এর নেপথ্যে রিয়েছে এক গূঢ় কাহিনি।

ভারতীয় পুরাণ ব্রহ্মার বিরুদ্ধে অজাচারের অভিযোগ এনেছে। বলা হয়, ব্রহ্মা নিজের মেয়েকেই কামনা করেছিলেন। কী সেই গল্প আসুন জেনে নেওয়া যাক। ব্রহ্মার মানস কন্যা ছিলেন দেবী সরস্বতী। শ্বেতপদ্মে উপবীতা দেবীর রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রজাপতি। ফলে তাঁর মনে মেয়ের সঙ্গে মিলনের ইচ্ছা জাগল। তিনি সরস্বতীকে বললেনও সেই কথা। নিজের পিতার মুখে এই কথা শুনে দেবী ক্রুদ্ধ হলেন। বাবার এহেন আচরণ মেনে নিতে না পারেননি। তাই নিজেকে রক্ষা করতে ব্রহ্মার কাছ থেকে পালাতে শুরু করেন তিনি। আত্মরক্ষার জন্য কখনও গাভী, কখনও ঘোটকী বা গর্দভীর রূপ ধরতে শুরু রূপ ধারণ করেন। এদিকে সঙ্গমে প্রবলভাবে ইচ্ছুক ব্রহ্মাও বাকদেবীর পিছু ছাড়তে নারাজ। তিনিও এইসব প্রাণীর পুরুষ রূপ ধরে বারবার সরস্বতীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতে থাকেন। বারবার মিলনেই সৃষ্টি হয় প্রাণী জগতের।

এদিকে ব্রহ্মার এমন ব্যাভিচার সহ্য করতে না পেরে দেবাদিদেব মহাদেব ব্রহ্মাকে হত্যা করেন। আর সরস্বতী চলে যান পাতালে। এদিকে মৃত্যুর শরীর ত্যাগ করেন ব্রহ্মা। তারপর শিবকে তুষ্ট করতে শুরু করেন তপস্যা। ব্রহ্মার তপপ্স্যা দেখে সন্তুষ্ট হন ভোলানাথ। এরপর তিনি দেখেন সকল দেব দেবীর মন্দির থাকলেও তাঁর কোনও মন্দির নেই। কারণ তিনি অভিশপ্ত। ফলে ব্রহ্মা এবার নিজেই নিজের মন্দির গড়তে চাইলেন।

দেবলোক থেকেই একটি শিলাখন্ড ত্তিনি পৃথিবীর বুকে নিক্ষেপ করলেন। সেটি এসে পড়ল চমৎকারপুর নামে একটি জায়গায়। সেখানেই ব্রহ্মা গড়ে তুললেন তাঁর মন্দির। এদিকে সরস্বতী তো পাতালে। তঁকে ডাকলেন ব্রহ্মা। বললেন ‘এখন থেকে তুমি এই পৃথিবীতে এসে আমার কাছে সব সময় থাকো। আমি তোমার জলে ত্রিসন্ধ্যা তর্পণ করব।’

ভীত সন্ত্রস্ত সরস্বতী তখন প্রজাপতিকে বলেন, “আমি লোকের স্পর্শে ভয় পাই বলে পাতালে থাকি। কিন্তু আপনার আদেশও অমান্য করতে পারব না। তাই আপনি সব দিক বিচার করে একটি অন্য ব্যবস্থা করুন।” এরপর ব্রহ্মা একটি হ্রদ খনন করলেন। সেই হ্রদে এসে বসবাস শুরু করলেন সরস্বতী। হ্রদের পাহাড়ায় রইলেন বিষধর সর্পকুল।

শিবপুরাণ মতে, ব্রহ্মা চতুর্মুখ হয়েছেন পরে, আগে তিনি পঞ্চ মুখবিশিষ্ট ছিলেন। একবার শিব ও পার্বতীর সামনে অপশব্দ ব্যবহার করেন। ফলে ক্রুদ্ধ হয়ে শিব তাঁর একটি মুখ কেটে দেন। এর নেপথ্যেও রয়েছে ব্রহ্মদেবের কামকাহিনি।

সরস্বতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে ব্রহ্মা যখন তাঁকে রমন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তখন তিনি দেহজ তেজ থেকে সৃষ্ট কন্যাকে বলেছিলেন, “অয়ি সুন্দরী! গননে নিবৃত্ত হও।” ক্রুদ্ধ সরস্বতী তখন রেগে গিয়ে পিতাকে অভিশাপ দেন, “পিতা হয়ে তুমি যে মুখে ধর্ম বিরুদ্ধ অশ্লীল কথা বললে, সেই মুখে তুমি বিরুদ্ধভাষী হবে।” এই ঘটনার পর থেকেই ব্রহ্মা যত্র তত্র অকথা কুকথা বলে ফেলতেন। তারই ফলশ্রুতি একটি পঞ্চানন থেকে চতুরানন হন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here