মহাকবি কালিদাসকে বলা হয় সরস্বতীর বরপুত্র। তাঁর হাতেই রচিত হয়েছে ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’, ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম’, ‘বিক্রমবর্ষীয়ম’ একের পর মহামূল্য সাহিত্য। মহাকবি কালিদাসের অহং বোধ ছিল চূরান্ত। তিনি মনে করতেন বিশ্বে তাঁর থেকে জ্ঞানী আর কেউ নেই।

একদিন রাস্তায় যেতে যেতে কালিদাসের অত্যন্ত জলের পিপাসা পেল। জল খুঁজতে খুঁজতে মাঠের পর মাঠা পেরিয়ে এক গ্রামে পৌঁছালেন তিনি। সেখানে একটি কূপ চোখে পড়ল তাঁর। সেই সঙ্গে দেখলেন কূপের পাশে এক মহিলা জল ভরছেন। কালীদাস ওই নারীর কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন, “দেবী আমি অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত, আমাকে একটু দয়া করে জল দিন।” জল দেওয়ার পরিবর্তে মহিলা কালীদাসের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন, “আমি আপনাকে চিনি না, আগে আপনি নিজের পরিচয় দিন, তারপরে আমি জল দেব। তার আগে আপনি জল পাবেন না।”

নিজ গর্বে গর্বিত কালিদাস তখন বললেন, “আমি আপনার অতিথি হই।” প্রত্যুত্তরে সেই নারী বললেন, “বিশ্বে মাত্র দু’জন অতিথি রয়েছেন, এক অর্থ এবং অন্যটি যুবক।” অবাক কালীদাস এবার বললেন, “আমি সহনশীল।” এবারও প্রত্যুত্তর করলেন ওই গ্রাম্য মহিলা। বললেন, “এই পৃথিবীতে দু’জনই সহনশীল রয়েছে। এই পৃথিবী যা আমাদের বোঝা বহন করে। অন্যটি সহিষ্ণু গাছ রয়েছে, যা পাথর ছুঁড়ে মারার পরেও ফল দেয়।”

কালিদাস মহিলার জ্ঞান শুনে বুঝতে পারেন ইনি কোনও সাধারণ মহিলা নন। তিনি তখন বললেন, “আমি বাধা।” ভদ্রমহিলা বললেন, “আপনি আবার ভুল উত্তর দিচ্ছেন। বিশ্বে মাত্র দুটি বাধা রয়েছে। একটি পেরেক এবং অন্যটি চুল।” এরপরে কালিদাস হার শিকার করে বলেন, “আমি জানি না কিছুই আমি বোকা।” তখন ওই মহিলা বলেন, “এই দুনিয়ায় কেবল দু’জন বোকা। একজন রাজা যিনি যোগ্যতা ছাড়াই সমস্ত কিছু পরিচালনা করেন। অন্যজন দরবার যারা রাজাকে সন্তুষ্ট করতে ভুল জিনিসেরও প্রশংসা করেন।”

এরপরেই কালিদাস নিজের ভুল বুঝতে পারেন। এও বোঝেন যে যিনি সামনে দঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি কোনও সাধারণ নারী নন। সঙ্গে সঙ্গে ওই নারীর পা ধরে ফেলেন মহাকবি। তখনই তিনি দেখেন সামনে দঁড়িয়ে রয়েছেন দেবী সরস্বতী। এভাবেই সরস্বতীর বরপুত্র হয়ে ওঠেন মহাকবি কালিদাস।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here