
নিজস্ব প্রতিবেদন, দিল্লি, ৭ অক্টোবর: ভারতের জন্য এক সোনালি অধ্যায়ের শুরু হল নয়াদিল্লিতে বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের মাধ্যমে। রবিবার পর্যন্ত ৬টি করে সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ- মোট ১৮টি পদক জিতে তালিকার সাত নম্বরে আছে ভারত।
এই সাফল্য শুধু পদকের হিসাব নয়, বরং দেশের প্যারা ক্রীড়া আন্দোলনের ভিত্তি মজবুত করার প্রতীক, এমনটাই মনে করেন ভারতের কিংবদন্তি প্যারালিম্পিয়ান তথা প্যারালিম্পিক কমিটি অব ইন্ডিয়া-র সভাপতি দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া। তিনি টেলিকমএশিয়া.নেট-কে বলেন, ‘এই ইভেন্ট ভারতের জন্য সময়োপযোগী। টোকিও প্যারালিম্পিক্সে আমরা ১৯টি পদক এবং প্যারিসে রেকর্ড ২৯টি পদক জিতেছি। এবার আশা করছি সেই ফল আরও ভালো হবে।’ নয়াদিল্লিতে প্যারালিম্পিক্স পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঝাঝারিয়া চান, এই ইভেন্টকে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করতে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, ভারতের প্রতিটি জেলায় প্যারা-ফ্রেন্ডলি মাঠ তৈরি হোক। টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিম বা গোস্পোর্টস ফাউন্ডেশনের মতো সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আমাদের সহায়তা করেছে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি।’ ঝাঝারিয়ার মতে, ক্রীড়া সরঞ্জামের প্রচুর দাম এখনও অনেক ক্রীড়াবিদের সামনে বড়ো চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক গ্রহণ যোগ্যতা এখনও একটি বড়ো বাধা। আশা করি আন্তর্জাতিক প্যারালিম্পিক কমিটি এবং বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স এই বিষয়ে গুরুত্ব দেবে।’
প্রথম দিন জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে দর্শকসংখ্যা ছিল একেবারেই কম। প্যারা ক্রীড়া এখনও ভারতের প্রধান ধারায় যে গ্রহণযোগ্য নয়, তা যেন স্মরণ করিয়ে দেয় এই দর্শক সংখ্যা। ঝাঝারিয়া বলেন, ‘প্যারা অ্যাথলিটদের জন্য ইভেন্ট আয়োজন সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে সেই সব অ্যাথলিটরা অংশ নেন, যাঁদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অনেকে হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। আমরা বেশিরভাগ টয়লেট হুইলচেয়ার-সুবিধাযুক্ত করেছি এবং আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, স্টেডিয়াম এখন প্রায় ১০০ শতাংশ প্যারা-ফ্রেন্ডলি।’ রাজস্থানের চুরুতে জন্ম নেওয়া ঝাঝারিয়া আট বছর বয়সে একটি গাছ থেকে পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগে চলে আসেন। সেই ঘটনায় আহত হয়ে বাঁ হাত হারান তিনি। এথেন্স প্যারালিম্পিক্সে সোনা জয়ী এই অ্যাথলিট জানান, ‘যখন আমি সোনা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম, বিমানবন্দরে কেউই আমাকে স্বাগত জানাতে আসেনি। আজ পরিস্থিতি বদলেছে। আমার হৃদয় ভরে যায় গর্বে যে প্যারা অ্যাথলিটরা এখন ভারতের পদক জয়ের ক্ষেত্রে বড়ো অবদান রাখছে।’
২০৩৬ অলিম্পিক্স ও ২০৩০ সালে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভারত। তবে তার জন্য এই চ্যাম্পিয়নশিপ সফলভাবে আয়োজন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভারতের কাছে। এই চ্যাম্পিয়নশিপ সুষ্ঠু ভাবে আয়োজিত হলে এরপর আন্তর্জাতিক ইভেন্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে ভারতের দাবিকে আরও শক্তিশালী করবে।