আরজি কর কাণ্ডের আবহেই ফের একবার চর্চায় চলে এল ৩২ বছর আগে রাজস্থানের আজমেরে ১০০ ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা। সম্প্রতি ১৯৯২ সালের কুখ্যাত  আজমের ধর্ষণ ঘটনায় শুনানি দেওয়া হয়েছে। কুখ্যাত এই ধর্ষণ ও হুমকি মামলায় বাকি ছয় অভিযুক্তকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনাল একটি পকসো আদালত। এর পাশাপাশি দোষীদের প্রত্যেককে পাঁচ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও দিতে হবে। সংগৃহীত মোট ৩০ লক্ষ টাকা নির্যাতিতাদের মধ্যে সমান ভাবে ভাগ করে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন পকসো আদালতের বিচারক রঞ্জন সিংহ।

মঙ্গলবার সাজা দেওয়া হল নাফিস চিস্তি, নাসিম চিস্তি ওরফে টারজান, ইকবাল ভাটি, সেলিম গনি চিস্তি, সোহেল গনি চিস্তি ও সইদ জামির হোসেন। বিচার চলাকালীন এই ছ’জন রাজস্থান ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে সকলেই আত্মসমর্পণ করে।

আজ থেকে ৩২ বছর আগে রাজস্থানের আজমেরে স্কুলছাত্রীদের গণধর্ষণ করা হত রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করে। মুখ বন্ধ করতে অশালীন ছবি তুলে করা হত ব্ল্যাকমেল। ১০০ জনেরও বেশি কিশোরীর সঙ্গে এই নক্কারজনক কাজ করা হয়।

ফারুখ চিস্তি এবং নাফিস চিস্তি সেই সময় আজমেরে কুখ্যাত মস্তান ছিল। পাশাপাশি ছিল রাজনৈতিক যোগ। এলাকায় তাঁদের একটি গ্যাং ছিল। অজমেরে ধারাবাহিক গণধর্ষণের ঘটনায় ফারুখ এবং নাফিসই ছিলেন মূল অভিযুক্ত।

১৯৯২ সালের ২১ এপ্রিল এই গণধর্ষণের খবর প্রথম প্রকাশিত হয় সংবাদপত্রে। টনক নড়ে পুলিশ-প্রশাসনের। শুরু হয় তদন্ত।

তদন্তে জানা যায়, অজমেরে স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের বন্ধুত্ব করত ফারুখ। তারপর প্রলোভন দেখিয়ে নির্জনে দেখা করে ধর্ষণ করা হত। ধর্ষণের সময়ের ছবিও তুলে রাখা হত ব্ল্যাকমেল করার উদ্দেশ্যে। এইভাবে চলত বারবার ধর্ষণ।

ফারুখ এবং নাফিসের নেতৃত্বাধীন গ্যাংয়ের অনেকেই অজমের শরিফ দরগার খাদিম পরিবারের সদস্য ছিল। তাই কেউ টুঁ শব্দটি করত না।

এই ঘটনার পর বহু নির্যাতিতার পরিবারই অজমের ছেড়ে দেয়। কেউই প্রকাশ্যে এ নিয়ে সরব হননি।

অপরাধের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তদন্তে নামে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছিল অভিযুক্তদের। এই ঘটনায় মোট ছ’টি চার্জশিট জমা দিয়েছিল পুলিশ। তাতে নাম ছিল ১৮ জন অভিযুক্তের। ১৪৫ জনেরও বেশি সাক্ষীর নাম ছিল। মাত্র ১৭ জন নির্যাতিতা তাঁদের বয়ান রেকর্ড করিয়েছিলেন।

১৯৯৮ সালে অজমেরের একটি দায়রা আদালত আট জন অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায়। কিন্তু রাজস্থান আদালত তাঁদের মধ্যে চার জনকে মুক্তি দেয়। ২০০৩ সালে অন্য চার জন, মইজুল্লাহ ওরফে পুত্তন, ইশরাত আলি, আনোয়ার চিস্তি এবং শামসুদ্দিনের সাজার মেয়াদ কমিয়ে ১০ বছর করে সুপ্রিম কোর্ট।

২০০৭ সালে ফারুখকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০১৩ সালে ফারুখকে মুক্তির নির্দেশ দেয় রাজস্থান হাই কোর্ট।

২০০৩ সালে দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নাফিস। পরে অবশ্য জামিন পায়। মঙ্গলবার তাকে এবং বাকি পাঁচ অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে রাজস্থানের একটি পকসো আদালত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here