আরজি কর কাণ্ডে উত্তপ্ত সারা বিশ্ব। এ বিষয়ে একদিন সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়! তাঁর ‘নীরবতা’ নিয়ে জল্পনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার সকালে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন তৃণমূলের সেনাপতি। সেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের সমস্ত রাজ্যের সরকারকে অনুরোধ করেছেন ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন বলবৎ করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘চাপ’ দিতে। অভিষেক বলেছেন, ‘‘এমন কঠোর ধর্ষণ বিরোধী আইন আনতে হবে, যা ঘটনার ৫০ দিনের মধ্যে অপরাধীকে চিহ্নিত করে দোষী সাব্যস্ত করা নিশ্চিত করবে এবং তাতে দোষীকে কঠোরতম সাজা দেওয়ার নিদান থাকবে।’’

আরজি করের ঘটনার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার মুখ খুললেন অভিষেক। গত ৯ অগস্ট ভোরে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার পাঁচ দিন পরে ১৪ অগস্ট মাঝরাতে অভিষেক প্রথম ওই বিষয়ে মন্তব্য করেন। তার সাত দিন পরে আবার বৃহস্পতিবার সকালে অভিষেক লিখলেন। তবে এ বার আরজি করের ঘটনার থেকেও বেশি তিনি জোর দিয়েছেন গোটা দেশে নিরন্তর ঘটে চলা ধর্ষণের ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে।

অভিষেক লিখেছেন, ‘‘গত ১০ দিনে যখন আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে, মানুষ সুবিচারের দাবি জানাচ্ছেন, সেই সময়েও, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ দিনে দেশে ৯০০টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। প্রতি দিন ৯০টি ধর্ষণের ঘটনার রিপোর্ট লেখানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় চারটি এবং প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অথচ এত কিছু সত্ত্বেও এই অপরাধের কোনও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান বার করা গেল না।’’

বৃহস্পতিবার অভিষেক আরও লিখেছেন, ‘‘দেশের ধর্ষণের অভিযোগের পরিসংখ্যানই বলছে, এই মুহূর্তে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন কতটা জরুরি হয়ে পড়েছে। এমন আইন, যা অপরাধের ৫০ দিনের মধ্যে ধর্ষণকারীকে চিহ্নিত করে দোষী সাব্যস্ত করা নিশ্চিত করবে। নিশ্চিত করবে তার দ্রুত এবং কঠোর শাস্তি। কোনও সারবত্তাহীন প্রতিশ্রুতি দেবে না।’’ এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের উপর ‘চাপ সৃষ্টি করে’ ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন তৈরি করার পরামর্শও দিয়েছেন অভিষেক। তিনি লিখেছেন, ‘‘সমস্ত রাজ্যগুলির সরকারের উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে কঠোর ধর্ষণ বিরোধী আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা। এর থেকে বিন্দুমাত্র কম কিছু হলে, তা হবে নেহাৎই প্রতীকী এবং আদতে তাতে কোনও কাজ হবে না।’’

গত ১৪ অগস্ট রাতে আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে ‘রাত দখলের’ ডাক দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। প্রতিবাদ চলাকালীনই আচমকা আরজি কর হাসপাতালে ঢুকে ভাঙচুর চালায় একদল দুষ্কৃতী। অভিষেক সেই ঘটনার পরেই প্রথম সমাজমাধ্যমে মুখ খোলেন। তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে কলকাতা পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে কথা বলেছেন তিনি। তাঁকে অনুরোধ করেছেন, আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনায় যাঁরা দায়ী, তাঁরা যে রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকই হোন না কেন, তাদের চিহ্নিত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে আরজি করের প্রতিবাদী চিকিৎসকদের দাবিকে ‘যথার্থ’ বলে মন্তব্য করে অভিষেক বলেছিলেন, সরকারের কাছে তাঁরা এটুকু তো আশা করতেই পারেন যে, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

কিন্তু সেই শেষ। তার পরে আর অভিষেককে প্রকাশ্যে বা সমাজমাধ্যমে আরজি করের আন্দোলন বা আন্দোলনকারীদের নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি। তাঁর ওই ‘নীরবতা’ স্বাভাবিক ভাবেই জল্পনা বাড়িয়েছিল তাঁর ‘নিস্পৃহতা’ নিয়ে। কারণ, লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের কিছু দিন পর থেকেই তিনি নবান্নের সঙ্গে ‘শীতল সম্পর্ক’ বজায় রাখছিলেন বলে কানাঘুষো চলছিল দলের অভ্যন্তরেই। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর অভিষেকের চোখের চিকিৎসার জন্য কিছু দিনের জন্য বিদেশে যাওয়া পরে ২১ জুলাইয়ে তৃণমূলের ধর্মতলার সভার আয়োজন থেকে নিজেকে ‘দূরে রাখা’ সেই জল্পনায় আরও ইন্ধন দিয়েছিল। আরজি কর নিয়ে অভিষেকের ‘নীরবতা’ নিয়েও তাই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছিল জল্পনা। এই পরিস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার আবার মুখ খুললেন অভিষেক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here