আগ্রা ফোর্ট- উত্তরপ্রদেশের আগ্রায় অবস্থিত ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের একটি। এটি বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের এক তাজমহল থেকে প্রায় ২.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমান সময়ের কাঠামোটি মুঘলদের দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। যদিও এই দুর্গ এখানে ছিল একাদশ শতক থেকে, তখন এর নাম ছিল ‘বদলগড়’। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় আগ্রা দুর্গ হয়ে উঠেছিল যুদ্ধস্থল। আসুন জেনে নিই এর আকর্ষণীয় ইতিহাস সম্পর্কে।
সিকন্দর লোদি ছিলেন দিল্লির প্রথম সুলতান যিনি তাঁর সদর দফতর আগ্রা ফোর্টে স্থানান্তরিত করেন এবং সেখান থেকে শাসনকার্য শুরু করেন। লোদি এটিকে তাঁর ‘দ্বিতীয় রাজধানী’ বানিয়েছিলেন।
১৫৫৮ সালে আকবর যখন আগ্রায় আসেন, ঐতিহাসিক সভাসদ আবুল ফজল তাঁকে বলেছিলেন যে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদটি ‘বদলগড়’ নামে পরিচিত ছিল। আকবর রাজস্থান থেকে আনা লাল বেলেপাথর দিয়ে এটির পুনর্নির্মাণ করেছিলেন।
সাদা মার্বেল দিয়ে স্থাপত্য বানানোর শখ ছিল শাহজাহানের। তিনি আগ্রা ফোর্টের কিছু স্থাপনাও পুনর্নির্মাণ করেন। আধুনিক আগ্রা দুর্গর সৌন্দর্য এইভাবে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
শাহজাহানকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন পুত্র ঔরঙ্গজেব। সিংহাসনচ্যূত হওয়ার পর আগ্রা দুর্গেই বন্দি ছিলেন শাহজাহান।
১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় এই দুর্গটি যুদ্ধস্থলে পরিণত হয়।
আগ্রা ফোর্টের দুটি দরজা রয়েছে – দিল্লি গেট এবং লাহোর গেট। লাহোর গেটকে অমর সিং রাঠোরের নামানুসারে অমর সিং গেটও বলা হয়। যেহেতু ভারতীয় সেনাবাহিনী এখনও আগ্রা দুর্গের উত্তর অংশ ব্যবহার করে, তাই দিল্লি গেট জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। অমর সিং গেট দিয়ে পর্যটকরা প্রবেশ করেন।
আগ্রা দুর্গ এক স্থাপত্য বিস্ময়। ২০০৪ সালে আগ্রা দুর্গ স্থাপত্যের জন্য আগা খান পুরস্কারও জিতেছে। আবুল ফজল লিপিবদ্ধ করেছেন যে বাংলা ও গুজরাটে প্রায় পাঁচশোরও বেশি ভবন আগ্রা দুর্গের ইমারত থেকে অনুপ্রাণিত নকশার দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
শাহজাহান ছাড়াও দুর্গের ভেতরের ভবনগুলোকে ব্রিটিশরা ধ্বংস করে ব্যারাক বানিয়ে ফেলে।
আগ্রা ফোর্টে যোধা বাইয়ের প্রাসাদের দেওয়ালের ফাটল থেকে তাজমহল দেখা যায়।
আগ্রা ফোর্টের খাস মহল ছিল দিল্লির লাল কেল্লার দিওয়ান-ই-খাসের মডেল।
নাগিনা মসজিদ আগ্রা ফোর্টে শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত একটি ছোট কিন্তু চমৎকার মসজিদ। এটি সম্পূর্ণভাবে দুর্গের মহিলাদের জন্য নির্মিত হয়েছিল।
আকবর যখন দুর্গের পুনর্নির্মাণ করেন তখন প্রায় ১,৪৪৪,০০০ নির্মাতা আট বছর ধরে কাজ করেছিলেন। ১৫৭৩ সালে দুর্গের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল।
আগ্রা দুর্গের প্রাচীর ৭০ ফুট উঁচু।